এস. এম. রুবেল:
বঙ্গোপসাগরের তীরঘেষে গড়ে উঠা কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে প্যারাবন ও বেড়িবাঁধ। কিন্তু সেই প্যারাবন কেটে মরুভূমি বানিয়েছে ভূমিদস্যুরা। যার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের এই দুঃসময়ে হুমকিতে পড়েছে দ্বীপের ৫ লাখ মানুষ ও সেখানকার জীববৈচিত্র্য।
সাপের ন্যায় সরু খাল ধরে সোনাদিয়া দ্বীপে যাওয়ার পথে দেখা যায়, ঘটিভাঙ্গা-সোনাদিয়া খালের উত্তর পশ্চিম পাশে প্রায় ৮’শ একর প্যারাবন কেটে নির্মাণাধীন ঘেরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এতে করে অসংখ্য পশু, পাখি ও জীববৈচিত্র্য নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ছে।
সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন রাতে প্যারাবনের ভিতরে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। সারাদিন উন্নত প্রযুক্তির কাটার মেশিন ও স্কেভেটার দিয়ে প্যারাবন কাটা হয়। আর রাতে সেগুলোর একটি অংশ পুড়িয়ে দেয়া হয়।
তারা আরো জানান, অবৈধভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে এই ঘেরটি নির্মান করছে আমিন শরীফ মাস্টারসহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা। তৎকালীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের ছত্রছায়ায় এসব জমি দখল করার কারণে ভয়ে মুখ খোলতে পারেনি দ্বীপের বাসিন্দারা। তবে তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ঘুর্ণিঝড় আসলে আমাদের কি হবে জানি না। বিশাল আকৃতির প্যারাবন কাটার কারণে মশার পরিমাণ বেড়েছে। এমনকি মশার উপদ্রবের কারণে ঘুমাতে পারছি না।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, থানা ও বনবিভাগের কর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে খুশি করার দায়িত্বে ছিল একটি গ্রুপ। অপর একটি গ্রুপ ছিল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষকে খুশি করার দায়িত্বে। যার ফলে বিনা বাঁধায় উন্নত প্রযুক্তির মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে প্যারাবন কাটার সাহস দেখিয়েছে ভূমি দস্যুরা।
আমরা মহেশখালীবাসীর সমন্বয়ক এনামুল হক জানান, সোনাদিয়া দ্বীপ ইসিএ এলাকা। সংরক্ষিত এই এলাকার প্যারাবন কাটা ও সেখানে আগুন জ্বালানো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। আর প্রশাসনের এই নীরবতায় দায়ী সোনাদিয়া দ্বীপটি ধ্বংসের জন্য।
মহেশখালী বনবিভাগের রেঞ্জ অফিসার মুহাম্মদ আয়ুব আলী জানান, ২০১৭ সালে সোনাদিয়া দ্বীপটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেন। এরপর থেকে বনবিভাগ আইনগতভাবে ওইসব জমিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। তখন প্রভাবশালীরা এখানে প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণ শুরু করে। যা লিখিতভাবে স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মারমা জানিয়েছেন, যারা প্যারাবন কাটছে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। এখনো যদি পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।