বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত দ্বীপ কুতুবদিয়া আর পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী বঙ্গোপসাগরের এক জায়গায় এসে সঙ্গম করেছে। একটু খোলাসা করে বলি, মহেশখালী বঙ্গোপসাগরের উত্তরে যে জায়গায় এসে থমকে গেছে সেখান থেকেই কুতুবদিয়ার শুরু। এপাড় থেকে ওপাড় দেখা যায় কিন্তু সাগরের পানিই কেবল দুই দ্বীপকে যুগ যুগ ধরে আলাদা করে রেখেছে।
ছুটির দিনগুলিতে কোন কারণে কর্মস্থলে আটকে গেলে পারতপক্ষে সময় নষ্ট করার লোক আমি না। নতুন কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠি। সেই জায়গা ঘুরে না আসা পর্যন্ত শিরশির করা উত্তেজনা কিছুতেই কমে না।
এই ছুটিতে যেই জায়গাটা ঘুরে আসি সেটা ছিলো একটা সৈকত এবং সেই সৈকতের জুতসই কোন নাম নাই। কেউ কেউ সাগরপাড় বলে। টমটম চালকরা চেনে অবশ্যই সাইড পাড়া মাস্টার সাহেবের প্রজেক্টের বেড়িবাঁধ হিসেবে। সেই সৈকতে ঘুরতে ঘুরতে স্থানীয় এক মুরব্বির সাথে পরিচয় হয়। তিনি বলেন, এটার নাম মনের জ্বালা সৈকত। চাচাকে জিজ্ঞেস করি, এই সৈকতের নাম মনের জ্বালা কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘মনে জ্বালা ছাড়া এই দুনিয়ায় কোন বেডামানুষ নাই। এই সৈকতে আসলে মনের জ্বালা সমুদ্রের গর্জনে হারিয়ে যায়। সাগরের উত্তাল ঢেউ, সৈকতের চিক চিক করা বালি, দূর সমুদ্রে হেলেদুলে চলা বিশাল জাহাজ, অবিরত বাতাসের শাঁই শাঁই করে বয়ে চলা সবই মনের জ্বালা ভুলিয়ে দেয়। এক বসায় ঘন্টা পর ঘন্টা চলে যাবে, পূর্বদিকে থাকা সূর্য পশ্চিমে গিয়ে সাগরে ডুবে যায় তারপরও বসা থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না। মনের জ্বালা সব সাগরে ঢালি দিয়েই তারপর আপনি ঘরে ফিরতে পারবেন। তাই এটার নাম মনের জ্বালা সৈকত’। মুরব্বির যুক্তিতে পেরে উঠি না। শেষমেষ আমিও মেনে নিতে বাধ্য হই, এটা মনের জ্বালা সৈকত।
কী কী পাবেন মনের জ্বালা সৈকতে: আগেই বলে নিই, এই সৈকতে আধুনিক কিছুই নাই। এখানে বসার কোন জায়গা নাই, খাওয়ার কোন পানি নাই, চিবানোর কোন চিপস কিংবা বাদাম নাই, এমনকি বিরক্তি দেখানোর জন্য কোন হকারও নাই। এখানে পাবেন একটানা বয়ে চলা বাতাস, সমুদ্রের টানা ঢেউ, হাঁটার জন্য নির্জন সৈকত। এখানে কৃত্রিম কিছুই পাবেন না, যা পাবেন সবই প্রাকৃতিক। কৃত্রিম চাইলে বরং এখানে না আসা আপনার জন্য ভালো।
যাবেন কীভাবে: মহেশখালী উপজেলার যেকোনো রুট ধরে প্রথমে আপনাকে মাতারবাড়ীর রাজঘাট স্টেশনে যেতে হবে। সেখান থেকে কোন টমটম নিলে সেটার পাইলট আপনাকে পৌঁছে দিবে সাইডপাড়া মাস্টার সাহেবের প্রজেক্টের বেড়িবাঁধ। হ্যাঁ, যেটাকে কেউ কেউ মনের জ্বালা সৈকতও বলে।
লিখেছেন— ফারুক মাহমুদ